Blog
যবের ছাতু সকাল বেলা খাওয়ার উপকারিতা

সকালের খাবার যেন সারা দিনের এনার্জির বুস্টার! কিন্তু আমরা অনেকেই এখনো বুঝে উঠিনি—এই সকালে ঠিক কোন খাবারটা আমাদের শরীরের জন্য সবচেয়ে উপকারী। আজ আমরা এমন এক খাবার নিয়ে আলোচনা করবো, যেটি আমাদের প্রাচীন খাদ্যতালিকার অংশ হলেও এখন নতুনভাবে আবার জনপ্রিয় হয়ে উঠছে—তা হলো যবের ছাতু।
সাধারণ, সস্তা আর সহজলভ্য এই খাবারটি শুধু পেট ভরায় না, বরং শরীর, মন ও মস্তিষ্ককে দেয় এক নতুন প্রাণশক্তি। বিশেষ করে যদি আপনি সকালে নিয়মিত খান, তাহলে এর উপকারিতা আরও বাড়ে। চলুন তাহলে জানি—সকাল বেলা যবের ছাতু খাওয়ার সুনির্দিষ্ট উপকারিতা, খাওয়ার উপায় এবং কিছু দরকারি পরামর্শ।
যবের ছাতু কী?
যবের ছাতু হলো ভাজা যব (Barley) গুঁড়ো করে তৈরি এক ধরনের মিহি গুঁড়া, যা সহজে পানিতে মিশে যায় এবং হজমেও সহায়ক। এটি সাধারণত ভেজে তৈরি করা হয় বলে স্বাদেও ঝাঁঝালো ও মজাদার।
প্রাচীনকাল থেকেই গ্রামবাংলায় এটি সস্তা, সহজলভ্য এবং স্বাস্থ্যকর খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আধুনিক পুষ্টিবিদ্যার চোখেও যবের ছাতু এখন “superfood” হিসেবে স্বীকৃত।
সকালবেলা যবের ছাতু খাওয়ার সময় কেন সেরা?
সকাল বেলা আমাদের শরীর ডিটক্স মোডে থাকে। ঘুম থেকে উঠে শরীরের পেট খালি থাকে, তখন সহজ হজমযোগ্য ও পুষ্টিকর কিছু খেলে সেটি দ্রুত শরীরে শোষিত হয়। এই সময় যবের ছাতু খেলে যা হয়:
- দ্রুত এনার্জি দেয়
- দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা থাকে
- ডায়াবেটিস, হাই ব্লাড প্রেশার ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে
- হজম ও মেটাবলিজম সক্রিয় করে তোলে
যবের ছাতুর পুষ্টিগুণ একনজরে
উপাদান | প্রতি ১০০ গ্রামে |
---|---|
ক্যালরি | ~ ৩৭০ ক্যালোরি |
ফাইবার | ~ ১৫ গ্রাম |
প্রোটিন | ~ ১২ গ্রাম |
ভিটামিন B কমপ্লেক্স | যথেষ্ট |
ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন, সেলেনিয়াম | পর্যাপ্ত পরিমাণে |
পুষ্টিগুণের দিক থেকে যবের ছাতু একটি ব্যালেন্সড ফুড—যেখানে আপনি পাবেন প্রোটিন, ফাইবার, মিনারেলস ও কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট একসাথে।
সকাল বেলা যবের ছাতু খাওয়ার ১০টি উপকারিতা

- পেট দীর্ঘসময় ভরা রাখে: যবের ছাতুতে আছে সলিউবল ফাইবার যা পেট ভরা অনুভূতি তৈরি করে এবং বারবার খাওয়ার প্রবণতা কমায়। ওজন কমাতে চাচ্ছেন? তাহলে ব্রেকফাস্টে এটি রাখুন।
- ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে সহায়ক: যবের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) অনেক কম। এতে থাকা বেটা-গ্লুকান ফাইবার রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি সকালে খাওয়া দারুণ উপকারী।
- হজম ভালো করে: প্রাকৃতিক ফাইবার থাকার কারণে এটি পাচনতন্ত্রে কাজ করে। সকালে খেলে পেট পরিষ্কার থাকে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
- কোলেস্টেরল কমায়: বেটা-গ্লুকান ফাইবার আবার কোলেস্টেরল শোষণে বাঁধা দেয়। নিয়মিত সকালে যবের ছাতু খেলে LDL (খারাপ কোলেস্টেরল) কমে এবং HDL (ভালো কোলেস্টেরল) বাড়ে।
- হার্টের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখে: যবের ছাতুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ম্যাগনেশিয়াম হার্টের আর্টারিগুলোকে সচল রাখে এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
- ত্বক ও চুলের জন্য ভালো: যবের ছাতুর জিঙ্ক, আয়রন ও সেলেনিয়াম ত্বকে উজ্জ্বলতা এনে দেয়। সকালে খেলে স্কিন ডিটক্স হয়, চুলও শক্তিশালী হয়।
- শরীরের শক্তি বাড়ায়: বেশি কার্বোহাইড্রেট থাকলেও তা ধীরে হজম হয় বলে সারা দিনে ধীরে ধীরে এনার্জি দেয়। সকালে খেলে আপনি দিনভর ক্লান্তিহীন থাকতে পারেন।
- গ্যাস্ট্রিক ও অ্যাসিডিটির বিরুদ্ধে কাজ করে: অনেকেই খালি পেটে দুধ বা চা খেলে গ্যাস্ট্রিকের শিকার হন। কিন্তু যবের ছাতু হালকা ও সহনীয় হওয়ায় এটি পেটে কোনো সমস্যা তৈরি করে না।
- রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: যবের ছাতুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস ও মিনারেলস ইমিউন সিস্টেমকে মজবুত করে। বিশেষ করে সকালে খাওয়ার ফলে এটি আরও কার্যকর হয়।
- হরমোন ব্যালেন্স করে: বিশেষ করে মেয়েদের পিরিয়ডকালীন সমস্যা বা PCOS-এর ক্ষেত্রে এটি সাহায্য করতে পারে কারণ এটি ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বাড়ায়।
কীভাবে খাবেন: যবের ছাতুর কয়েকটি জনপ্রিয় রেসিপি
১. দুধ দিয়ে যবের ছাতু
উপকরণ:
- যবের ছাতু – ২ টেবিল চামচ
- গরম দুধ – ১ কাপ
- মধু বা খেজুরের গুড় – স্বাদমতো
- এলাচ গুঁড়ো – সামান্য
পদ্ধতি:
সব উপকরণ মিশিয়ে হালকা গরম অবস্থায় খেতে পারেন।
২. নোনতা যবের ছাতু
উপকরণ:
- যবের ছাতু – ২ টেবিল চামচ
- গরম পানি – ১ কাপ
- লবণ, কাঁচা মরিচ, ধনেপাতা – স্বাদমতো
- সামান্য লেবুর রস
পদ্ধতি:
সবকিছু একসাথে মিশিয়ে সকালবেলা খেয়ে নিন।
৩. স্মুদি স্টাইল যবের ছাতু
উপকরণ:
- যবের ছাতু – ১ টেবিল চামচ
- কলা / আপেল – ১টি
- দুধ – ১ কাপ
- মধু – ১ চা চামচ
পদ্ধতি:
ব্লেন্ড করে স্মুদি বানিয়ে ফেলুন! শিশুদের জন্যও চমৎকার।
কিছু প্রয়োজনীয় পরামর্শ
- প্রথমবার খেতে গেলে কম পরিমাণে শুরু করুন, তারপর ধীরে বাড়ান।
- বেশি গরমে দুধ দিয়ে না খাওয়াই ভালো—ছাতু কষা হয়ে যেতে পারে।
- ডায়াবেটিক হলে মধুর বদলে খেজুরের গুড় ব্যবহার করুন বা একেবারে না দিন।
- দিনে একবার সকালে খাওয়া যথেষ্ট। অতিরিক্ত খেলে ফোলাভাব বা গ্যাস হতে পারে।
উপসংহার
যবের ছাতু কোনো ফ্যাশনেবল বিদেশি সুপারফুড নয়—এটি আমাদের ঘরের এক অমূল্য সম্পদ। সকালে একটি সাধারণ গ্লাস যবের ছাতু শুধু শরীর নয়, মনকেও ফুরফুরে রাখতে পারে।
জীবনের ছোটখাটো পরিবর্তন যেমন—“চা বিস্কুট বাদ দিয়ে সকালে এক গ্লাস ছাতু”—এইটুকু সচেতনতা আপনার স্বাস্থ্য, এনার্জি এবং লাইফস্টাইল বদলে দিতে পারে।
আজ থেকেই শুরু করুন। শরীরকে দিন সেই প্রাকৃতিক শক্তি যার খোঁজে আপনি এতদিন ছিলেন।
Further Reading
- যবের ছাতু ও মধু: স্বাস্থ্যকর পানীয়ের অপরিহার্য উপকারিতা
- মিক্সড ছাতুর উপকারিতা: স্বাস্থ্য ও সুস্থতার এক সম্পূর্ণ উপায়
- ছোলার ছাতু খাওয়ার উপকারিতা: শক্তি ও পুষ্টির ভান্ডার
- যবের ছাতু তালবিনার উপকারিতা: সুন্নতের আলোয় বৈজ্ঞানিক সমাধান
- ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য যবের ছাতুর উপকারিতা
- সুন্নতের আলোকে স্বাস্থ্যকর খাবার: যবের আটা