স্বাস্থ্য

আমসত্ব কি? আমসত্বর খাওয়ার উপকারিতা ও কিভাবে বানায়

আমসত্বর খাওয়ার উপকারিতা

আমসত্ব বাঙালিদের জন্য একটি অতি পরিচিত ও জনপ্রিয় খাবার। এটি মূলত পাকা আম থেকে তৈরি এক ধরনের শুকনো মিষ্টি খাবার, যা বছরের অন্যান্য সময়েও আমের স্বাদ উপভোগের সুযোগ দেয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এটি বিভিন্নভাবে তৈরি করা হয় এবং সংরক্ষণ করা হয় বছরের পর বছর। এই লেখায় আমরা আমসত্ব কী, এর উপকারিতা এবং এটি তৈরি করার পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

আমসত্ব কি?

আমসত্ব হলো একধরনের আমের শুকনো নির্যাস, যা মূলত পাকা আমের রস সংরক্ষণ করার একটি পদ্ধতি। পাকা আম থেকে রস বের করে তা নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে শুকিয়ে পাতলা স্তরে তৈরি করা হয়। এটি খেতে মিষ্টি, সুগন্ধি এবং কিছুটা চুইংগামের মতো নরম হয়ে থাকে।

বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের গ্রামাঞ্চলে আমসত্ব একটি জনপ্রিয় খাদ্য, যা বহু বছর ধরে প্রচলিত। অনেকেই এটি বাজার থেকে কেনেন, আবার কেউ কেউ ঘরেই তৈরি করে সংরক্ষণ করেন।

আমসত্ব খাওয়ার উপকারিতা

আমসত্ব শুধু স্বাদেই নয়, এটি স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। এটি প্রচুর ভিটামিন ও খনিজ উপাদান সমৃদ্ধ, যা শরীরের বিভিন্ন উপকারে আসে। নিচে আমসত্ব খাওয়ার কিছু উল্লেখযোগ্য উপকারিতা আলোচনা করা হলো:

  • ভিটামিন সি-এর ভালো উৎস: আমসত্ব তৈরি হয় আম থেকে, যা প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং সর্দি-কাশি প্রতিরোধে কার্যকর।
  • হজমশক্তি বৃদ্ধি করে: আমসত্বে ফাইবার থাকে, যা হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য কমায় এবং পাচনতন্ত্রের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।
  • রক্তস্বল্পতা দূর করে: আমসত্বে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে, যা রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। বিশেষ করে, যেসব নারীরা রক্তস্বল্পতায় ভোগেন, তাদের জন্য এটি অত্যন্ত উপকারী।
  • শক্তি বৃদ্ধি করে: এটি প্রাকৃতিক চিনি সমৃদ্ধ হওয়ায় তা শরীরে তাৎক্ষণিক শক্তি জোগায়। দীর্ঘক্ষণ শারীরিক পরিশ্রম করার পর বা ক্লান্তি দূর করতে এটি দারুণ কার্যকর।
  • ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে: আমসত্বে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং ত্বককে সুস্থ রাখে। এটি ত্বকের বলিরেখা কমিয়ে ত্বক টানটান রাখতে সাহায্য করে।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে: অনেকেই মনে করেন, আমসত্ব খেলে ওজন বেড়ে যায়। কিন্তু এটি আসলে উচ্চ ফাইবারযুক্ত হওয়ার কারণে হালকা খাবার হিসেবে খাওয়া যেতে পারে। এটি দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে এবং অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমায়।
  • মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে: আমসত্ব খেলে মস্তিষ্কে সেরোটোনিন নিঃসৃত হয়, যা মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক। এটি হতাশা ও দুশ্চিন্তা কমানোর জন্যও কার্যকর।

কিভাবে আমসত্ব তৈরি করা হয়?

আমসত্ব তৈরি করা তুলনামূলকভাবে সহজ, তবে এতে কিছু সময় লাগে। নিচে ধাপে ধাপে আমসত্ব তৈরির প্রক্রিয়া বর্ণনা করা হলো:

উপকরণ:

  • পাকা আম – ২-৩ কেজি
  • চিনি – ১ কাপ (ঐচ্ছিক, আমের স্বাদ অনুযায়ী কমবেশি করা যায়)
  • লবণ – ১ চিমটি
  • এলাচ গুঁড়ো – ১ চা চামচ (ঐচ্ছিক, সুগন্ধের জন্য)

প্রস্তুত প্রণালি:

  • আমের খোসা ছাড়ানো ও রস বের করা: প্রথমে পাকা আম ভালোভাবে ধুয়ে নিন। এরপর আমের খোসা ছাড়িয়ে আঁটি আলাদা করে নিন। একটি ব্লেন্ডারে আমের গুড়ো অংশ নিয়ে মসৃণ পেস্ট তৈরি করুন।
  • আমের রস রান্না করা: একটি পাত্রে আমের রস ঢেলে মাঝারি আঁচে জ্বাল দিন। মাঝে মাঝে নাড়তে থাকুন যাতে নিচে লেগে না যায়। চিনি ও লবণ মিশিয়ে দিন। চিনি গলে মিশে গেলে এতে এলাচ গুঁড়ো দিন।
  • মিশ্রণ ঘন করা: রস ধীরে ধীরে ঘন হয়ে আসবে এবং কিছুটা জেলির মতো হয়ে যাবে। যখন এটি অনেকটাই ঘন হয়ে যাবে, তখন চুলা বন্ধ করে দিন।
  • শুকানোর জন্য পাতলা স্তর বানানো: একটি প্লেট বা ট্রেতে পলিথিন বা কলাপাতা বিছিয়ে নিন। এরপর তার উপর রান্না করা আমের মিশ্রণ ঢেলে সমানভাবে ছড়িয়ে দিন।
  • রোদে শুকানো: এটি রোদে রেখে শুকাতে দিন। সাধারণত ২-৩ দিন সময় লাগে পুরোপুরি শুকানোর জন্য। মাঝে মাঝে এটি উল্টে দিতে পারেন যাতে সব দিক সমানভাবে শুকায়।
  • টুকরা করা ও সংরক্ষণ: যখন এটি পুরোপুরি শুকিয়ে যাবে, তখন এটি পছন্দমতো আকারে কেটে নিন। তারপর বায়ুরোধী কৌটায় সংরক্ষণ করুন। সঠিকভাবে সংরক্ষণ করলে এটি মাসের পর মাস ভালো থাকবে।

উপসংহার

আমসত্ব শুধু একটি মজাদার খাবার নয়, এটি স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, হজমশক্তি উন্নত করে, ত্বক ও চুলের যত্নে সাহায্য করে এবং অনেক উপকারী পুষ্টিগুণ সরবরাহ করে। ঘরেই সহজে এটি তৈরি করা যায় এবং দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। তাই, এই মৌসুমে বাড়িতে আমসত্ব তৈরি করে দেখুন এবং এর স্বাদ ও উপকারিতা উপভোগ করুন!

গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর (FAQ)

১. আমসত্ব কতদিন সংরক্ষণ করা যায়?

সঠিকভাবে শুকানো ও সংরক্ষণ করলে ৬-১২ মাস পর্যন্ত ভালো থাকে।

২. কীভাবে আমসত্ব সংরক্ষণ করব?

বায়ুরোধী কন্টেইনারে রেখে ঠান্ডা ও শুকনো জায়গায় রাখলে দীর্ঘদিন ভালো থাকে।

৩. কী ধরনের আম দিয়ে আমসত্ব তৈরি করা যায়?

পাকা, মিষ্টি জাতের আম (যেমন ল্যাংড়া, হিমসাগর, আম্রপালি) সবচেয়ে ভালো।

৪. চিনি ছাড়া আমসত্ব তৈরি করা সম্ভব?

হ্যাঁ, চিনি ছাড়া প্রাকৃতিকভাবে মিষ্টি আম ব্যবহার করলে চিনি না দিয়েও তৈরি করা যায়।

৫. শিশুদের জন্য কি এটি উপযুক্ত?

হ্যাঁ, এটি স্বাস্থ্যকর, তবে অতিরিক্ত চিনি মেশানো থেকে বিরত থাকা ভালো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *